The History of Gaza গাজার ইতিহাস: 1599-1999

0

 




গাজার ইতিহাস: 1599-1999

1599-1800: অটোমান যুগ

1599-1700 শতক: অটোমান শাসন

  • অটোমান শাসন: গাজা ১৬শ শতকের প্রথমদিকে অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। এই সময়কালে এটি সিরিয়ার বৃহত্তর প্রদেশের অংশ ছিল।
  • অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি: গাজা তার স্থানীয় কৃষি উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক গুরুত্বের কারণে উন্নতি লাভ করে। এটি মিসর ও লেভান্টের মধ্যে বাণিজ্যিক পথে অবস্থিত ছিল।
  • প্রশাসনিক কাঠামো: অটোমানরা গাজার প্রশাসন পরিচালনা করতেন স্থানীয় গভর্নরদের মাধ্যমে (যাদের "মুতাসার্রিফ" বলা হত)। শহরে স্থানীয় আরব নেতাদের এবং অটোমান কর্মকর্তাদের মিশ্রণ ছিল।

1800 শতক: পরবর্তীকালের অটোমান যুগ

  • অদৃশ্যতা: ১৯শ শতকের শেষদিকে, অটোমান সাম্রাজ্যের প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে এবং গাজার গুরুত্ব কিছুটা কমে যায়। প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার কারণে শহর কিছুটা অদৃশ্য হয়ে পড়ে।
  • অবকাঠামো উন্নয়ন: এই সময়কালে কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন ঘটে, যেমন নতুন রাস্তা নির্মাণ এবং আধুনিক প্রশাসনিক প্রথার প্রবর্তন।

1800-1917: ব্রিটিশ এবং মিসরীয় প্রভাব

প্রাথমিক 1800: মিসরীয় শাসন

  • নেপোলিয়নের আক্রমণ: ১৭৯৯ সালে গাজা নেপোলিয়নের বাহিনীর দ্বারা সাময়িকভাবে দখল হয়। তবে, এটি শীঘ্রই অটোমানদের দ্বারা পুনরুদ্ধার করা হয়।
  • মিসরীয় নিয়ন্ত্রণ: ১৯শ শতকের প্রারম্ভে, মুহাম্মদ আলী পাশার নেতৃত্বে গাজা মিসরীয় শাসনের অধীনে আসে। এই সময়ে স্থানীয় প্রশাসন ও অবকাঠামো উন্নতির কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

মধ্য থেকে শেষ 1800: অটোমান ও ব্রিটিশ আগ্রহ

  • অটোমান শাসনের পুনরুদ্ধার: ১৯শ শতকের মধ্যভাগে, অটোমানরা আবার গাজার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। শহরটি অটোমান সাম্রাজ্যের একটি ছোট প্রদেশ হিসেবে রয়ে যায়।
  • ব্রিটিশ আগ্রহ: ১৯শ শতকের শেষদিকে, ব্রিটেনের আগ্রহ বৃদ্ধি পায় গাজার কৌশলগত অবস্থান এবং সুয়েজ খালের নির্মাণের কারণে।

1917-1948: ব্রিটিশ ম্যান্ডেট এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও ব্রিটিশ ম্যান্ডেট

  • ব্রিটিশ দখল: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ বাহিনী গাজা দখল করে। শহরটি ব্রিটিশ ম্যান্ডেট ফিলিস্তিনের অংশ হয়ে যায়, যা লিগ অফ নেশনস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন: ব্রিটিশ প্রশাসন বিভিন্ন সংস্কার এবং অবকাঠামো প্রকল্প শুরু করে, যেমন সড়ক উন্নয়ন এবং পাবলিক সার্ভিসের উন্নতি। তবে, এই সময়ে ইহুদি এবং আরব জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

1920s-1940s: উত্তেজনা বৃদ্ধি

  • আরব-ইহুদি সংঘাত: ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসন এবং ভূমি ক্রয় বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আরব জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। গাজা, যেটি একটি প্রধানত আরব শহর, এই সময়ে উত্তেজনা ও সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
  • পিল কমিশন (1937): ব্রিটিশ সরকার একটি বিভাজন পরিকল্পনা প্রস্তাব করে, যা আলাদা ইহুদি ও আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল। আরব নেতৃত্ব এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে, যার ফলে আরও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়।

1948-1967: মিসরীয় প্রশাসন ও আরব-ইসরায়েলি সংঘাত

1948: আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ

  • প্রথম আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ: ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের ফলে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বহু ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়। গাজা মিসরীয় বাহিনী দ্বারা দখল করা হয় এবং মিসরীয় শাসনের অধীনে চলে আসে।
  • শরণার্থী সংকট: যুদ্ধের ফলে ফিলিস্তিনিরা ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়। গাজার শরণার্থী সংখ্যা বেড়ে যায়, যা স্থানীয় সম্পদ ও অবকাঠামোকে চাপ দেয়।

1950s-1960s: মিসরীয় নিয়ন্ত্রণ

  • রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি: মিসরীয় শাসনের অধীনে গাজা একটি সামরিক এলাকা হিসেবে পরিচালিত হয়। স্থানীয় প্রশাসন সরাসরি মিসরের নিয়ন্ত্রণে ছিল, এবং অঞ্চলটি অর্থনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিক দমনমূলক পরিস্থিতি ভোগ করেছে।
  • বিপ্লবী আন্দোলন: এই সময়ে ইসরায়েল এবং মিসরীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে।

1967-1993: ইসরায়েলি দখল এবং শান্তি প্রক্রিয়া

1967: ছয় দিনের যুদ্ধ

  • ইসরায়েলি দখল: ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল গাজা দখল করে এবং এটি ইসরায়েলি সামরিক দখলের অধীনে চলে আসে।
  • বসতি সম্প্রসারণ: দখলের সময় ইসরায়েল গাজায় বসতি স্থাপন করে, যা স্থানীয় ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে চলতে থাকা উত্তেজনার প্রধান উৎস হয়ে ওঠে।

1970s-1980s: ইনটিফাদা ও প্রতিরোধ

  • প্রথম ইনটিফাদা (1987-1993): ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া প্রথম ইনটিফাদা ব্যাপক প্রতিবাদ, ধর্মঘট, এবং সহিংস সংঘাত দ্বারা চিহ্নিত ছিল। এটি ইসরায়েলি দখল ও বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া ছিল।
  • অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব: ইনটিফাদার ফলে গাজার অর্থনীতি ও দৈনন্দিন জীবন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। সামরিক নিয়ন্ত্রণ, কারফিউ, ও নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি পায়।

1990s: শান্তি প্রক্রিয়া ও ওসলো চুক্তি

  • ওসলো চুক্তি (1993): ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO) এর মধ্যে সই হওয়া ওসলো চুক্তি একটি শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করে এবং প্যালেস্টাইন অথরিটি (PA) প্রতিষ্ঠিত হয়। গাজাকে প্যালেস্টাইনি নিয়ন্ত্রণে হস্তান্তর করা হয় এবং PA প্রশাসন শুরু হয়।
  • সীমিত স্বায়ত্তশাসন: ওসলো চুক্তি গাজার জন্য সীমিত স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে, যদিও ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ সীমান্ত, আকাশসীমা, এবং কিছু দৈনন্দিন বিষয় নিয়ে অব্যাহত থাকে।

সংক্ষেপ

১৫৯৯ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত গাজার ইতিহাস ব্যাপক পরিবর্তনের সাক্ষী। এই সময়ে অটোমান শাসন, ব্রিটিশ ম্যান্ডেট, মিসরীয় প্রশাসন, ইসরায়েলি দখল, এবং শেষ পর্যন্ত প্যালেস্টাইনি স্বায়ত্তশাসনের অবস্থান দেখা গেছে। প্রতিটি পর্ব গাজার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সামাজিক পরিস্থিতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। গাজার ইতিহাস বোঝা আজকের রাজনৈতিক ও মানবিক চ্যালেঞ্জগুলোর পটভূমি উপলব্ধিতে সাহায্য করে।

এই সারাংশটি গাজার ইতিহাসের একটি পূর্ণাঙ্গ আভাস প্রদান করে। বিস্তারিত গবেষণা এবং বিশেষ উৎসের মাধ্যমে প্রতিটি পর্বের আরও গভীর বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

                                                               


Tags

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)
To Top